ডেস্ক রিপোর্ট :একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যখন নানা কারণে জনগণের দৃষ্টিতে বিতর্কিত হয়ে যায়, অনিবার্য ভাবেই তাঁর আর প্রার্থী থাকা উচিত না। আর ওই প্রার্থীর কারণে শুধু তাঁর আসনেই না সামগ্রিক ভাবেই দলের উপর প্রভাব পড়ে। আলাদা একটি চাপ তৈরি হয়।
এবার নির্বাচনে বহুল আলোচিত ছিল আওয়ামী লীগের দুজন এমপি। এদের একজন হলেন কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আব্দুর রহমান বদি। তাঁকে নিয়ে বিতর্ক ছিল অনেক। আর দ্বিতীয় বিতর্কিত হলেন টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা। বদির বিরুদ্ধে ছিল মাদক ব্যবসার অভিযোগ। আর রানার বিরুদ্ধে ছিল মুক্তিযোদ্ধা হত্যার মামলা। আওয়ামী লীগ দুজন প্রার্থীকেই বদল করে দিয়েছে। তবে এই বদলে খুশি হতে পারেনি সাধারণ জনগণ। কারণ দুজনের আসনেই বদলি প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের স্বজনরাই। আব্দুর রহমান বদির বদলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন তাঁর স্ত্রী শাহীন আখতার চৌধুরী। এর ফলে আর যাই হোক বদিকে নিয়ে মানুষের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না। আবার আমানুর রহমান খানের বদলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন তাঁর বাবা আতাউর রহমান খান। এটিও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিতেও বিতর্কিত, নির্বাচনে অযোগ্য প্রার্থীদের বদলে তাঁদের স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। অবশ্য এমন বিতর্কিতদের কারও কারও স্বজন এবার মনোনয়ন পাননি। কিন্তু যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ২০০১-০৬ সালে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ছিল। তিনি হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক বিএনপির রাজনীতি করতেন। নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনে ফখরুদ্দিনের সরকার আসার পর আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছিল। দুর্নীতির দায়ে কারাভোগও করেছেন আমানউল্লাহ আমান। দণ্ডিত হওয়ার কারণে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর বদলে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন তাঁরই ছেলে ইরফান ইবনে আমান।
বিএনপির আরেক বিতর্কিত হলেন জিয়া পরিবারের জামাই সালাহউদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে ভারতে অবস্থানকারী সালাহউদ্দিন আহমেদ হাওয়া ভবন ও তারেক জিয়া ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়ায় গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অযোগ্য ছিলেন। এবারও নানা কারণে তিনি বিতর্কিত। সালাহউদ্দিনের বদলে এবার বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন তাঁরই স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তাঁর আসনে বদলি প্রার্থী দেওয়া হয়েছে তাঁর স্ত্রী ফাহমিদা ইয়াসমিন ছবিকে।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির বিতর্কিত নেতা মীর নাসিরের স্থলে বিএনপির মনোনয়ন পান তাঁর ছেলে মীর হেলাল। তবে দুজনই নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন।
ব্যাপক দুর্নীতি ও খাম্বা কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত ছিলেন ২০০১-০৬ সালের বিএনপির বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়ায় ২০০৮ সালে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। সেবার তাঁর স্ত্রী রুমানা মাহমুদ নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারও তাঁর আসনে তাঁর স্ত্রীকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদী। এবার নির্বাচনে সাইদীর আসন পিরোজপুর-১ থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন তাঁরই ছেলে শামীম সাইদী।
বাংলাদেশে নির্বাচনের রাজনীতিতে বিতর্কিত প্রার্থীদের স্বজনদের মনোনয়ন দেওয়ার মানেই হলো বিতর্কিতদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা। আর এই পুনর্বাসনকে সাধারণ ভোটাররা কখনোই ভালো ভাবে নেয় না।
বাংলা ইনসাইডার
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-